পিকনিকে কুইজ বা কূপন আয়োজনের দায়িত্ব স্বেচ্ছায় গ্রহণ করার পর ফান্ড পেলাম মাত্র ২৫০ টাকা। তাও আবার অনেকটা জোর করে পিকনিকের নির্ধারিত টাকা থেকে ১৫০ টাকা কম দিয়ে আর নাসিমকে বলার পর ও দিল ১০০ টাকা। যাই হোক এইটুকু সম্বল করে বুধবার বিকালে গিফট হিসেবে টয়লেট সামগ্রী নিয়ে আসলাম । এসেই তাড়াতাড়ি কুইজের জন্য প্রশ্ন করে প্রিন্ট, ফটোকপি করলাম তারপর কূপন বানানো, গিফট র্যপিং যখন শেষ হল তখন ঘড়িতে দেখলাম সময় রাত ১ টা। সকাল ৭:৩০ মিনিটে মিরপুর থাকতে হবে উঠতে পারবো তো? এই আশঙ্কা থেকে নিজের উপর দুইবার পানি থেরাপি প্রয়োগ করলাম।
বৃহস্পতিবার সকালে অবশ্য ঠিক সময়মতোই বাসা থেকে বের হলাম কিন্ত যানজটের কারনে কাঙ্খিত সময়অনুসারে পৌছতে পারলাম না। গাড়ি ছাঁড়ার কথা ছিল ৮ টায় কিন্তু ছাড়ল ৯:৩০ টায়। যাত্রী সংখ্যা ২২ যেখানে বাসের সিট সংখ্যা ৪৭।
বাস ছাড়ার পর থেকেই শুরু হল গান। বলতে গেলে মিশুই পুরো বাসটা মাতিয়ে রেখেছে লালন, মাতাল রাজ্জাক বা শাহ আব্দুল করিমের গান গেয়ে সাথে ছিল হাসান, আর আজিজ তার হেঁড়ে গলা নিয়ে সবার সাথেই দোহার ধরছিল। লোক গান যে পিকনিকেও গাওয়া যাই গতকালই আমি প্রথম দেখলাম।
আনন্দের মধ্য দিয়ে ২ ঘণ্টা পার করে ১১:৩০ এর দিকে আমরা নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ উপজেলার পেরাবো নামক গ্রামে অবস্থিত “বাংলার তাজমহলে” পৌঁছে গেলাম। ৫০ টাকায় টিকেট কেটে প্রবেশ করলাম কিন্তু আশানুরূপ কিছু পেলাম না। তারপর বাংলার তাজমহল থেকে বের হয়ে আসলাম পানাম নগরীতে। বিনা টাকায় পানাম নগরী ভ্রমন করে আমার ৫০ টাকার বাংলার তাজমহল ভ্রমনের কিছুটা শোধ তুললাম। পানাম নগরের প্রাচীন বাসিন্দাদের কথা চিন্তা করতে করতে লাঞ্চ ওখানেই করে নিলাম। লিচু গাছে উঠে খাওয়া পরবর্তী বিশ্রাম নিয়ে কারুশিল্প জাদুঘরের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। সেখানে গিয়ে পেয়ে গেলাম লোক কারুশিল্প মেলা ও লোকজ উত্সব-১৪২০ এর। জাদুঘরে আমাদের আদি বাসিন্দাদের ব্যবহৃত জিনিসপত্র ও মেলায় ঘুরতে ঘুরতেই মসজিদ থেকে ভেসে আসলো মাগরিবের আযানের ধ্বনি।
এর মধ্যে সর্দার বাড়ির পুকুরের পাশের মাঠে বসে সবাই দিয়ে দিল বিশেষ কুইজ পরীক্ষা। খাতা মূল্যয়ন শেষে ভ্রমনের ইতি টেনে আমরা ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। বাসে উঠে কুইজ বিজয়ীদের নাম ঘোষণা ও অদ্ভুত সব উপহারের মোড়ক খোলার মধ্য দিয়ে কিছু সময় পার করে শুরু হল কূপন পর্ব। কূপন পর্বে সিয়াম ভাই স্পন্সর হয়ে ১ জনকে উপহারের ঘোষণা দিল। সবাই নিজেই কূপন তুলে গাই-গুই করতে করতে যার কূপনে যা লেখা ছিল তা করতে থাকল। যেহেতু উপহার আছে তাই সবার মতামত নিয়ে নম্বার প্রদান চলতে থাকলো। ভেবেছিলাম মাহবুব তার ভাগ্যে পরা “প্রথম প্রেমের কাহিনী” শোনাতে পারবে না, কিংবা মুজাহিদ ভাই অফ মুডের মানুষ (আমার মনে হয়) তার অভিজ্ঞতা(দুর্লভ) বর্ণনা করতে পারবে না কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে তারাই সর্বোচ্চ নাম্বার অর্জনকারীদের দলে চলে আসলো। সবচেয়ে অবাক করা দৃশ্য আমার কাছে মনে হয়েছে আরজুর নাচ ।
বাংলায় একটা প্রবাদ আছে “গর্ত পরের জন্য খুড়লে নিজেকে সেই গর্তে পরতে হয়” আমাকে সেই গর্তে পড়তে হয়েছে যখন আমার কূপন তোলার পালা আসলো। প্রথম থেকে আমি “প্রেমের প্রস্তাব” নামক কূপনটির অপেক্ষায় ছিলাম। এটা কার ভাগ্যে আসে আর সে কিভাবে পাড় পায়। একে একে সবারটা শেষ হয়ে গেল কিন্তু কেউ পেল না। বাকি থাকলো ৩ টা কূপন, ‘প্রেমের প্রস্তাব’, ‘নাচ’, ‘খালি’। কূপনের টুপি তখন ছিল সিয়ামের হাতে। আজিজ যখন তার ভাগ্যে পরা কৌতুক শোনাচ্ছিল তখন আমি সিয়ামের চোখ ফাঁকি দিয়ে সব কূপন চেক করে ‘খালি’ টা উপরে রাখলাম (ভুল ছিল কেন যে ‘প্রেমের প্রস্তাব’ টা হাওয়া করে দিলাম না)। ভেবেছিলাম “খালি” উঠলে তো বেঁচেই গেলাম বা ‘নাচ’ উঠলে হাত পা ছুড়াছুড়ি করে পার পেয়ে যাব । কিন্ত উঠানোর সময় সিয়াম হাত দিয়ে ডেকে দিল। আমি আর চোখে দেখে কূপন তোলতে পারলাম না, তারপর যা হওয়ার তাই হল নাসিমকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েই জড়িয়ে ধরলাম । এভাবেই শেষ হল সকল আনন্দ।
সারাদিন ভ্রমনের ফাঁকে ফাঁকে সবাই আসিফ ভাইয়ের/আজিজের/তন্নির ক্যামেরায় বা অন্যদের ক্যামেরায়ুক্ত মোবাইলে সব্বাই বন্দী হচ্ছিলো। বাকি সময় যার যার মত উপভোগ।
প্রথম থেকেই আমার বিশ্বাস হচ্ছিল না যে নাসিম ও তানভীর ভাই ট্যুরটা আয়োজন করতে পারবে। একটা তারিখ পার হওয়ার পর তো ট্যুরের আশাই আমি ছেড়ে দিয়েছিলাম। অবশেষে তারা সফল। তাদের ছোট করে হলেও ধন্যবাদ দিচ্ছি । মামুনকে বিশেষ ধন্যবাদ ই সি ই ডিপার্টমেন্টের হয়েও আমাদের ডাকে সাড়া দেওয়ার জন্য। বাকি সবাইকেও ধন্যবাদ দিচ্ছি কারণ তারা না হলে ট্যুরটা সম্ভব হত না, হতো না এত আনন্দ।
ঢাকার এত কাছে বা আমার বাড়ির (নরসিংদী) পাশে এত চমৎকার একটা জায়গা অথচ আমার ভ্রমন করা হয়নি ভাবতেই অবাক লাগে। হাঁ এটাই সত্য বাড়ির পাশের পড়শীর খোঁজ খবর কেউ রাখে না......। তাইতো লালন বলে গেছেন “বাড়ির পাশে আরশি নগর সেথা এক পড়শী বসত করে আমি একদিনও না দেখিলাম তারে...............।“