বিজয়ের বেয়াল্লিশ বছর পার হলেও বীরাঙ্গনাদের অন্ধকার কাটেনি। সম্মান দিয়ে বীরের মর্যাদা দিতে পারেনি রাষ্ট্র। লোকচক্ষুর আড়ালে থাকতে থাকতে মুক্তিযুদ্ধের সময়কালের এ তরুণীরা সবার অগোচরে এখন বৃদ্ধা। তাদের সম্ভ্রমের বিনিময়ে স্বাধীনতা লাভ করলেও স্বার্থপর দেশ তাদের প্রাপ্য সম্মান প্রদানে ব্যার্থ হয়েছে। স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধারা প্রতি মাসে নির্দিষ্ট অংকের ভাতা পেলেও বীরাঙ্গনাদের নেই কোনো সরকারি সাহায্য, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে দুবেলা খাবারের জন্যে হাত পাততে হচ্ছে তাদের। এমনকি সামাজিক স্বীকৃতিটিও হারিয়ে গেছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যার পর।
মুক্তিযুদ্ধে কতজন নারী ধর্ষিতা হয়েছিলেন এবং কতজন গর্ভবতী হয়েছিলেন তা অনির্ধারিত। জানা যায়, সামাজিক অপবাদের হাত থেকে বাঁচতে অনেক নারীই আত্মহত্যা করেন। অসংখ্য গর্ভবতী নারী চলে যান ভারতে বা অন্য কোথাও গোপনে সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য।
দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে রয়েছে আমাদের অনেক বীরাঙ্গনা নারী। যারা স্বাধীনতা যুদ্ধে নির্যাতিত হয়েছিলেন পাকবাহিনী হাতে।
বিবাহিত মেয়েদের তাদের স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজন তুলে নেয়নি। আবার যারা অবিবাহিত ছিল তাদের ভাগ্যে জোটে ‘মিলিটারির বৌ’-এর খেতাব।
পরিবার হারা এসব বীরাঙ্গনাদের বয়স এখন বেড়েছে। লজ্জা ভেঙে এখন একটু সাহায্যের আশায় তারা মুখ খুলছে। স্বাধীনতা দিবস বা বিজয় দিবসে কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা বা সংগঠন হয়তো কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করে তাদের কিছু সাহায্য করে। এরপর আর খুঁজে পাওয়া যায় না।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দিয়েছিলেন বীরাঙ্গনাদের মর্যাদা। ১৯৭২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করেছিলেন, “আজ থেকে পাকবাহিনী কর্তৃক নির্যাতিত মহিলারা সাধারণ মহিলা নয়, তারা এখন থেকে বীরাঙ্গনা খেতাবে ভূষিত।কেননা দেশের জন্য তারা ইজ্জত দিয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের চেয়ে তাঁদের অবদান কম নয়, বরং কয়েক ধাপ উপরে, যা আপনারা সবাই জানেন, বুঝিয়ে বলতে হবে না। তাই তাঁদের বীরাঙ্গনার মর্যাদা দিতে হবে এবং যথারীতি সম্মান দেখাতে হবে। আর সেই স্বামী বা পিতাদের উদ্দেশে আমি বলছি যে, “আপনারাও ধন্য। কেননা এ ধরনের ত্যাগী ও মহৎ স্ত্রীর স্বামী বা মেয়ের পিতা হয়েছেন।”
১৯৭২ সালে বীরাঙ্গনাদের জন্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যেগে গঠন করা হয়েছিল ‘নারী পুর্নবাসন ও কল্যাণ ফাউন্ডেশন’।
কিন্তু জাতির জনকের হত্যার পর তা হারিয়ে গেছে।
এখন বীরাঙ্গনাদের পাশে দাড়ানোর মত নেই কেউ। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সমন্বয় পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবির আহাদের কাছে বীরাঙ্গনাদের ব্যাপারে সরকারের কি পদক্ষেপ রয়েছে জানতে চাইলে বলেন, ‘কারা করবে তাদের জন্যে? করার কথা মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের, কিন্তু সেখানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসীরা কি আছে! সেখানে মন্ত্রী কিছুই জানেন না। মন্ত্রণালয় মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে না থাকলে যা হয় আর কি!’
হয়ত মুক্তিযোদ্ধ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী বা কর্মকর্তাদের প্রশ্ন করলে দেখা যাবে বীরাঙ্গনা কী তারা এটাই জানেন না..........!!!!!!!!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন